Uncategorized

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দায় ও করুণ অবস্থা

ইমরান ইমন

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে‌ শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ দিনদিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অপরাজনীতি,‌ অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আর অপশাসনে ভারাক্রান্ত দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব হলো শিক্ষার্থী। মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানরা বড়ো বড়ো স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে এসে এখানে অনিয়ম, অপশাসন, অব্যবস্থাপনার বেড়াজালে আটকা পড়েন। এসব বেড়াজালে অনেককেই জীবন বলি দিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ হলো গবেষণা। অথচ এখানে নেই গবেষণা, নেই গবেষণার গুরুত্ব। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিণত হয়েছে শুধু “আমলা-কেরানি” তৈরির কারখানায়।

এখানে মুক্তচিন্তার চর্চা নেই, মুক্তমতের স্বাধীনতা নেই, নেই সাংস্কৃতিক চর্চা। দাসত্ব, তেলবাজী, চাটুকারিতা, মেরুদন্ডহীনতায় ভর দিয়ে চলছে এখন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ। গুণগত শিক্ষা সংকট, আবাসন সংকট, সুষম খাদ্যের অপ্রতুলতা, চিকিৎসা সেবা, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা—এসব মৌলিক সংকট ও সমস্যায় জর্জরিত এসব বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ।

কোনো আন্দোলনের সূত্রপাত হলেই এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের দায় গিয়ে ঠেকে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।‌ কথায় কথায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের নজির একমাত্র এদেশেই রয়েছে। কিন্তু সেশনজট, অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনা নিরসনে তাদের কোনো উদ্যোগ নেই।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক উপাচার্য মিথ্যে বয়ান দিয়ে বেড়ান—তার বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি কোনো সেশনজট নেই! একটা বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে পরিচালিত হবে, কেমন মান থাকবে, কেমন পরিবেশ বজায় থাকবে—এসব কিন্তু সার্বিকভাবে একজন উপাচার্যের যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু বর্তমানে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালসমূহের নিয়োগকৃত উপাচার্যরা প্রকৃতপক্ষে উপাচার্য পদের জন্য কতটুকু যোগ্যতাসম্পন্ন—সে প্রশ্ন না ওঠে পারে না।

দেখা যায়, রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা, লবিং-এর বলে অনেক অযোগ্যই গুরুত্বপূর্ণ এ যোগ্যপদ দখল করে নিচ্ছেন।‌ একসময় দেখা যেত, দেশের কবি, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ এবং বরেণ্য যোগ্যব্যক্তিত্বরাই উপাচার্য হতেন—যারা মেরুদন্ডসম্পন্ন প্রসাশক—যাদের প্রকৃতঅর্থে বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পরিচালনা করার যোগ্যতা থাকতো। আর এখন কারা উপাচার্য হয়ে থাকেন—সেটা কারোরই অজানা নয়।

আর এ কারণেই আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর করুণ দশা।একটা দেশের ভবিষ্যৎ বোঝা যায় সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা দেখে। আমাদের যে বহুমাত্রিক সংকট—সেসবের জন্য আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মেরুদন্ডহীনতা দায়ী।

অথচ এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলে জনগণের ট্রেক্সের টাকায়—সার্বিকভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। রাষ্ট্রের যে এতো বড়ো বিনিয়োগ—রাষ্ট্র কি কোনদিন সে হিসেব কষেছে যে, আমাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কী দিচ্ছে—আমি কী আউটকাম পাচ্ছি? আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এখান থেকে কীভাবে তৈরি করা হচ্ছে? কোথাও কোনো জবাবদিহিতার তোয়াক্কা নেই!

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট; ফিচার সম্পাদক, দৈনিক ফেনী

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় –
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এজেডএস



Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button