Uncategorized

কুয়েতের ভিসা ও বিএমইটি কার্ড জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাৎ, চক্রের ৩ সদস্য গ্রেফতার

ডিএমপি নিউজ: ছদ্মনামে ফেসবুক পেজ খুলে কুয়েতের ভিসা ও বিএমইটি কার্ড জালিয়াত চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা-ওয়ারী বিভাগ।

গ্রেফতারকৃতরা হলো মোঃ শরিফুল ইসলাম, আবরার জাওয়ার তন্ময় ওরফে রেজাউল করিম রেজা ওরফে হৃদি মাহাজাবিন ও আহিয়ান শিশির ওরফে কামরুজ্জামান শিশির। এসময় তাদের হেফাজত থেকে ৪০টি পাসপোর্ট, ৯টি জাল ভিসা, জাল BMET কার্ডের ফটোকপিসহ প্রতারণায় ব্যবহৃত মোবাইল ও সীম উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ি ও ঢাকার ভাটারা এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার করে ডিবি-ওয়ারী বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম।

শনিবার দুপুরে ডিএমপির ডিবি কম্পাউন্ডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, একটি প্রতারক চক্র বিদেশে লোক পাঠানোর জন্য গুলশান-১ এ আল সাফার ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি অফিস নেয়। উক্ত অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করে ফেসবুকে বিভিন্ন ছদ্মনাম দিয়ে পেজ খুলে। সেখানে কুয়েতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কেউ বিদেশ যেতে ইচ্ছুক হলে তারা তার সাথে একটা চুক্তিতে করে। পরে এই প্রতারক চক্র আরবিতে লেখা বিভিন্ন ব্যক্তির কুয়েতের সঠিক ভিসা কপি সংগ্রহ করে। ভিসা নম্বর ঠিক রেখে ফটোশপের মাধ্যমে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তির নাম, পাসপোর্ট নম্বরসহ অন্যান্য তথ্য সংযুক্ত করে কুয়েতের জাল ভিসা তৈরি করে। জাল ভিসা, পাসপোর্টের ফটোকপি নিয়ে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা বিভিন্ন টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার থেকে তিন দিনের ট্রেনিং সম্পন্ন করে সার্টিফিকেট গ্রহণ করে। পরবর্তীতে উক্ত জাল ভিসা, পাসপোর্ট এবং ট্রেনিংয়ের সার্টিফিকেট নিয়ে একজন বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তি জনশক্তি ব্যুরোর প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন জেলার কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে অবস্থিত ফিংগার প্রিন্ট অফিসে ফিংগার প্রিন্ট দেওয়ার জন্য যায়। উক্ত অফিস কুয়েতের সরকারী ওয়েব সাইটে ভিসা নম্বর চেক করে Application Status: Approved থাকায় তারা বিদেশগমনেচ্ছুক ব্যক্তিদের ফিংগার প্রিন্ট গ্রহণ করে। পরে Status of Bio-Finger Enrollment: SUCCESS মর্মে এককপি যাত্রীদের প্রদান করে। এছাড়া গ্রেফতারকৃতরা একটি সঠিক বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স কার্ডের স্ক্যানকপিতে বিদেশগামী ব্যক্তির নাম-ঠিকানা লিখে তা রঙ্গিন কপি প্রিন্ট করে। সেটা দেখিয়ে বিএমইটি কার্ডও কমপ্লিট হয়েছে বলে জানায় বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের। এরপর বিমানের টিকিট দেখিয়ে তাদের নিকট থেকে চুক্তির পুরো টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায়।

অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এভাবে চক্রটি অর্ধশতাধিক মানুষের সাথে প্রতারণা করে প্রায় ১ কোটি ৩৫ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণার স্বীকার একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৭ আগস্ট গুলশান থানায় একটি মামলা রুজু হয়। মামলাটি তদন্তে প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারকদের শনাক্ত করে বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ি ও ঢাকার ভাটারা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত শরিফুল ইসলামের নামে বিভিন্ন থানায় ৪টি ও আবরার জাওয়ার তন্ময়ের নামে ১টি প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের মামলা আছে। আবরার জাওয়ার তন্ময় ও কামরুজ্জামান শিশির উভয়ই ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি। প্রতারণার উদ্দেশ্যে তারা লিঙ্গ পরিবর্তন করে হৃদি মাহাজাবিন থেকে আবরার জাওয়ার তন্ময় ওরফে রেজাউল করিম রেজা এবং শারমিন থেকে কামরুজ্জামান শিশির এর পরিচয় ধারণ করে। ডিবির নিবিঢ় তদন্তে তাদের প্রকৃত পরিচয় উদ্ধার হয়। ডিএমপির গুলশান থানায় রুজুকৃত মামলায় গ্রেফতারকৃতদের বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে কোন এজেন্সি সম্পর্কে ভালভাবে যাচাই-বাচাই না করে টাকা-পয়সা লেনদেন করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।



Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button