
প্রথমে তাঁরা ইংরেজি পড়তে ও বুঝতে পারেন এমন ব্যক্তিদের টার্গেট করে। এরপর সংগ্রহ করে তাঁদের মুঠোফোন নাম্বার। তারপর ঐ ব্যক্তির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুদে বার্তা পাঠাতেন। যাতে বলা হতো, ‘আপনি চাকরির পাশাপাশি পার্টটাইম কাজ করে বাড়তি আয় করতে পারবেন।’
তাঁদের সেই ফাঁদে পা দিলেই শুরু হতো প্রতারণা। আউটসোর্সিংয়ের টাকা জমা হওয়ার কথা বলে ওই মানুষদের খুলে দেয়া হতো একটা অ্যাকাউন্টও। কাজের বিনিময়ে টাকা জমা হওয়ার ভুয়া মেসেজও পাঠানো হতো সেই অ্যাকাউন্টে। কিন্তু সেই টাকা তুলতে চাইলেই নানা অজুহাত দেখিয়ে একাউন্ট হোল্ডারের কাছ থেকেই হাতিয়ে নিতেন টাকা। আর সেই টাকা চলে যেত দুবাইয়ে চক্রের প্রধানদের হাতে।
এভাবে বহু মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া চক্রটিকে সনাক্ত করেছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের একটি দল। মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকাসহ ওই চক্রের তিনজনকে বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, আল ফয়সাল, আরেফা বেগম এবং নিজাম উদ্দিন। তবে চক্রের প্রধান সম্রাট থাকেন দুবাইয়ে। গ্রেফতারকৃতদের থেকে এক লক্ষ পঁচাশি হাজার ৮’শ টাকা ও ৪ টি মোবাইল জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে আল ফয়সাল স্বীকার করেন তাঁর ছোট ভাই সম্রাট দুবাই থেকে আউটসোসিংয়ের নামে টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে একটি ওয়েবসাইট খোলেন। দেশে বসে সে ও তার মা আরেফা বেগম কয়েকজনকে নিয়ে প্রতারণার কাজটি করে যাচ্ছিলেন।
কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, প্রথমে তাদের মোবাইলের হোয়াটসএ্যাপে এসএমএস আসে। তাঁরা সরল বিশ্বাসে চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয়ের কথা চিন্তা করে অনলাইন আউটসোর্সিং কাজে যোগ দেন। পরবর্তীতে প্রতারকেরা টেলিগ্রামের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের সাথে যোগাযোগ করতে থাকে। অনলাইন প্রতারক ভিকটিমদের বলেন, তাদের পাঠানো ওয়েবসাইটে একটি একাউন্ট খুলে কাজগুলো করলে পেমেন্ট পাবেন। পেমেন্ট উত্তোলনের পূর্ব পর্যন্ত ভিকটিমের একাউন্টে টাকা জমা হতে থাকবে।
এভাবে কাজ করতে করতে অল্পতেই ভিকটিমের উক্ত ওয়েব সাইটের অ্যাকাউন্টে ১-২ লাখ টাকা জমা হলে অনলাইন প্রতারক ভিকটিমদের জানান যে, আপনি অনলাইনে কাজ করতে গিয়ে কিছু ভুল করেছেন যার কারণে আপনার কিছু পয়েন্ট কাটা গেছে। ফলে আপনার অ্যাকাউন্টের জামা হওয়া টাকা তুলতে হলে অগ্রিম পেমেন্ট করতে হবে। ভুক্তভোগীরা জমা হওয়া টাকা উত্তোলনের লোভে পড়ে তাদের চাওয়া অনুযায়ী টাকা দিতে থাকেন।
এভাবে প্রতারকেরা ধাপে ধাপে কারও কাছ থেকে ৬৮ হাজার, কারও কাছ থেকে ৫ লাখ, কারও কাছ থেকে ১৬ লাখ, কারও থেকে ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।
নগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি-বন্দর ও পশ্চিম) মোহাম্মদ আলী হোসেনের সার্বিক তত্বাবধানে এবং অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সামীম কবির ও সহকারী পুলিশ কমিশনার কাজী মোঃ তারেক আজিজের নির্দেশনায় বিশেষ টিমের পরিদর্শক হারুন অর রশিদ, উপপরিদর্শক মোহাম্মদ রাজীব হোসেন ও মোঃ রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল এই অভিযান পরিচালনা করে।
উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘চক্রটি পরিচালিত হচ্ছে দুবাই থেকে। চক্রের প্রধানদের একজন হলেন হাটহাজারীর সম্রাট, আরেকজন সাতকানিয়ার মান্নান। তাঁরা দুবাই থেকে বিভিন্ন নামে ছদ্মবেশ ধারণ করে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভুয়া আউটসোর্সিংয়ের কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়ে হুন্ডি ব্যাবসায়ীর মাধ্যমে দুবাই নিয়ে যায়।
তদন্তে গত ২ মাসে একটি অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ও আরেকটি অ্যাকাউন্টে ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকাসহ কারো অ্যাকাউন্টে ১৮ লাখ কারো একাউন্টে ১৫ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
পুলিশ বলেন, এই প্রতারণা চক্রটি দেশব্যাপী বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। আমরা তাদের বিষয়ে বিষদভাবে তদন্ত করছি।