Uncategorized

ভূমিহীন-দুস্থের জন্য ঘর, বাগিয়ে নিলেন দুই ধনী

নেত্রকোনার বারহাট্টা সদর ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই ঘরে থাকেন রবিন্দ্র সরকার ও তুলসী রানী সরকার নামের দুই সুবিধাভোগী। গত সোমবারের ছবি। আজকের পত্রিকা নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সদর ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ভূমি-গৃহহীন ও দুস্থদের জন্য ২০২২ সালে ১২টি ঘর নির্মাণ করা হয়। সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরির পর একই বছরের শেষ দিকে ঘরগুলো হস্তান্তর করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এসব ঘরের মধ্যে অন্তত দুটি বাগিয়ে নিয়েছেন দুই ধনী ব্যক্তি। তাঁদের নিজ নামে জমি, মোটরসাইকেল, দোকান ঘর ও রেস্তোরাঁর ব্যবসা আছে। শহর এলাকায় হওয়ায় আশ্রয়ণের এসব ঘরের জায়গার দাম অনেক। তাই তাঁরা ‘ঘুষ’ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন দুটি ঘর। 

স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে সম্প্রতি তদন্ত শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। সদর ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের অনেকটা সত্যতা পাওয়া গেছে।

উপজেলা প্রশাসন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১২টি ঘরের মধ্যে ৯টি বারহাট্টা শহরের গোপালপুর বাজারের পশ্চিম পাশে মোহনগঞ্জ-নেত্রকোনা সড়কঘেঁষা। সেখানে প্রথম ঘরটি বরাদ্দ পেয়েছেন সুলতান মিয়া ও তাঁর স্ত্রী রাবেয়া আক্তার। গোপালপুর বাজার এলাকায় বাকি তিনটি ঘরের একটির বরাদ্দ পেয়েছেন রবিন্দ্র সরকার ও তাঁর স্ত্রী তুলসী রানী সরকার। সম্প্রতি এলাকায় খোঁজ নিয়ে এসব সুবিধাভোগীর নিজ নামে সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

বারহাট্টা উপজেলা চত্বরে চা-নাশতা ও কফির দোকান আছে সুলতান মিয়ার। চত্বর এলাকার একমাত্র দোকান হওয়ায় উপজেলার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবাগ্রহীতারা এখানে আসেন। সুলতানের বাড়ি সদরের বিক্রমশ্রী গ্রামে। তবে ঘর বরাদ্দের তালিকায় তাঁর ঠিকানা হিসেবে সদর ইউনিয়নের ইসপিঞ্জাপুর গ্রামের কথা উল্লেখ আছে। বর্তমানে থাকেন শ্বশুরবাড়ি বাউসি ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামে। হোল্ডিংয়ের কাগজপত্রের বরাত দিয়ে বাউসি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) একটি সূত্র জানায়, কান্দাপাড়া বাজারে সুলতান মিয়ার নামে ১০ শতক জায়গা ও আধা পাকা বাড়ি আছে। বাড়ির সামনে আছে তিনটি দোকান। সেগুলো তিনি ভাড়া দেন।

গত জুন মাসে কান্দাপাড়া বাজারে ওই আধা পাকা বাড়িতে সুলতানের স্ত্রী রাবেয়ার সঙ্গে কথা হয়েছিল এই প্রতিবেদকের। আর গত সোমবার রাবেয়ার সঙ্গে কথা হয় বরাদ্দ পাওয়া ঘরের সামনে। সম্পদের বিষয়ে জানতে চাইলে রাবেয়া বলেন, কান্দাপাড়ায় তাঁর বাবার নামে চার একরের বেশি জমি আছে।

আশ্রয়ণের ঘর বরাদ্দ পাওয়ার বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে সুলতান মিয়া বলেন, ‘আমার নিজের কোনো জায়গাজমি নাই, শ্বশুরবাড়ি থাকি। যাঁরা বরাদ্দ দিয়েছেন, তাঁরা তদন্ত করেই বরাদ্দ দিয়েছেন।’ বাউসি ইউনিয়নে হোল্ডিং নম্বর থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সুলতান তাঁর দোকানে গিয়ে একবার কফি পানের দাওয়াত দেন। সেখানে এ বিষয়ে কথা বলতে চান। তবে তিনি কাউকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। 

এদিকে আরেক সুবিধাভোগী রবিন্দ্র সরকারেরও শহরের গোপালপুর বাজারে ‘আপ্যায়ন রেস্তোরাঁ’ নামে একটি দোকান আছে। সেখানে ভাত, মিষ্টান্নসহ অন্যান্য খাদ্য পাওয়া যায়। রবিন্দ্র সরকারের ছেলের রয়েছে একটি মোটরসাইকেল। ঘর বরাদ্দের তালিকায় রবিন্দ্রের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে সদরের ইসপিঞ্জাপুরে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাঁর গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। তাঁর স্ত্রী তুলসী রানী সরকারের বাবার বাড়ি বারহাট্টার গোপালগঞ্জে। 

বরাদ্দকৃত ঘরের বিষয়ে তুলসী রানী বলেন, তাঁদের কোনো জায়গাজমি নেই। রেস্তোরাঁর আয়ে সংসার চলে। এসব তদন্ত করেই ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের টাকা ও সম্পদ থাকার অভিযোগ মিথ্যা। তাঁরা এ ঘর পাওয়ার জন্য কাউকে কোনো টাকা দেননি বলেও দাবি করেন।

গোপালপুর বাজারের ব্যবসায়ী শহিদ মিয়া বলেন, আশ্রয়ণের ঘর যে জায়গায় করা হয়েছে, সেখানে প্রতি শতক জমির দাম প্রায় ২০ লাখ টাকা। সুলতান ও রবিন্দ্র দুজনই সম্পদশালী। তাঁরা কীভাবে ঘর পেলেন, তা বুঝে আসছে না। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ওই দুটি ঘর পাওয়ার জন্য দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা করে ঘুষ দিয়েছে এই দুই সম্পদশালী পরিবার। তারা গরিবের হক বঞ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে সদর ইউনিয়নের বর্তমান ভূমি সহকারী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এসব ঘর বরাদ্দের তালিকা করেছিলেন তৎকালীন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা। সম্প্রতি অভিযোগ ওঠার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমাকে সঙ্গে নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। আমাকে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের বিষয়ে অনেকটাই সত্যতা পাওয়া গেছে।’ 

ইউএনও ফারজানা আক্তার বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 



Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button