Uncategorized

দলবদলে ইউরোপিয়ান লিগের সঙ্গে সৌদির দাপট

সাহাবার সাগর, নিউজরুম এডিটর

সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ শেষ হলো ইউরোপিয়ান শীর্ষ পাঁচ ফুটবল লিগের দলবদল, যেখানে বরাবরের মতো সবচেয়ে বেশি খরুচে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। তবে এরপরের চার-পাঁচ নম্বরেও সাধারণত ইউরোপের কোনো লিগই সবচেয়ে বেশি খরচ করে খেলোয়াড় কেনাবেচায়। কিন্তু না এবার ইউরোপ নয়, এশিয়ার একটি লিগ তিন নম্বর জায়গা দখল করে নিয়েছে। সৌদি আরব প্রো লিগ এবার ইউরোপের লিগগুলোর সঙ্গে টেক্কা দিয়ে খেলোয়াড় দলে ভিড়িয়েছে। এ মৌসুমের দলবদল শেষে ইপিএলের পরে সবেচেয়ে বেশি ফুটবল তারকা এখন সৌদির লিগেই খেলছেন।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে দলে ভিড়িয়ে শুরুটা করে সৌদি প্রো লিগ। সেটা যে কেবলই শুরু, তা হয়তো ইউরোপিয়ান কোনো ফুটবলপ্রেমী বুঝতে পারেননি। ইউরোপিয়ান গ্রীষ্মকালীন দলবদলে মৌসুম শুরুর পরেই সংবাদমাধ্যমের হেডলাইন হতে শুরু করে সৌদি প্রো লিগ। একের পর এক ইউরোপিয়ান তারকাকে দলে ভেড়াতে শুরু করে এই লিগ।

পিএসজি থেকে নেইমার জুনিয়র, বায়ার্ন মিউনিখ থেকে সাদিও মানে, রিয়াল মাদ্রিদ থেকে করিম বেনজেমার মতো মহাতারকাদের দলে ভিড়িয়েছে সৌদি আরবের ক্লাবগুলো। এ ছাড়া এনগোলো কান্তে, জর্ডান হ্যান্ডারসনসহ আছে অনেক তারকা খেলোয়াড়। তাই তো এবার গোটা বিশ্বের নজর ইউরোপিয়ান ফুটবলের সঙ্গে সঙ্গে পড়বে সৌদি প্রো লিগের ওপরেও।

দলবদলে ইউরোপিয়ান লিগের সঙ্গে সৌদির দাপট

 

ইউরোপিয়ান দলবদলের মৌসুমে এবার সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো। এরপর ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান খরচ করছে ৯০০ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ইউরো। বুন্দেস লিগা, স্প্যানিশ লা লিগা আর সিরি আ’কে পেছনে ফেলে খরচের তালিকায় তিনে উঠে এসেছে সৌদি আরব প্রো লিগ। তাদের খরচ ৮৭৩দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ইউরো। এরপর চারে ইতালিয়ান সিরি আ। তাদের খরচ ৮৫১ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন ইউরো।

এবারের দলবদলের মৌসুমে বেশ ব্যস্ত সময় পার করেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো। আর্সেনাল তাদের দুর্বলতার জায়গাগুলো পূরণ করেছে। লিভারপুলও গেল মৌসুমে মধ্যমাঠের জটিলতায় ভুগছিল, সেই বিবেচনাতেই দলে টেনেছে নতুন খেলোয়াড়। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের আক্রমণভাগের সঙ্গে মধ্যমাঠেও এসেছে নতুন মুখ। আর ম্যানচেস্টার সিটি ছেড়ে যাওয়া ইয়াকি গুন্দোয়ান, রিয়াদ মাহারেজদের শূন্যস্থান পূরণেও এসেছে নতুন খেলোয়াড়।

আর্সেনাল

আক্রমণভাগের দুর্বলতার কারণে গত মৌসুমে অল্পের জন্য লিগ শিরোপা হাতছাড়া হয়েছিল আর্সেনালের। এবার তাই আক্রমণভাগে নতুন খেলোয়াড় দলে ভিড়িয়ে মৌসুম শুরু করেছে আর্সেনাল। নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী চেলসি থেকে ৭৫ মিলিয়ন ইউরোর খরচ করে জার্মান ফরোয়ার্ডকে দলে টেনেছে তারা। মধ্যমাঠে ইংলিশ তারকা ডেকলান রাইসকে দলে টানতে গুনতে হয়েছে ইংলিশ রেকর্ড ১১৬ মিলিয়ন ইউরো। এ ছাড়া রক্ষণে আয়াক্স থেকে ৪০ মিলিয়ন ইউরো খরচে দলে টেনেছে হুরেন টিম্বারকে। আর স্প্যানিশ তরুণ গোলরক্ষক ডেভিড রায়াকে ব্রেন্টফোর্ড থেকে ধারে এনেছে লন্ডনের ক্লাবটি। এবারের দলবদলের মৌসুমে ২৩৪.৯৪ মিলিয়ন ইউরো খরচ করছে আর্সেনাল।

চেলসি

নতুন মালিক ক্লাবের মালিকানা গ্রহণের পর থেকে দলবদলের মৌসুমে কাড়িকাড়ি অর্থ খরচ করে চলেছে চেলসি। বড় নামের খেলোয়াড়দের দলে ভেড়াতে বড় অঙ্কের অর্থও গুনতে হয়েছে অল ব্লুজদের। এবারের দলবদলের মৌসুমে ইউরোপের ক্লাবগুলোর ভেতর সবচেয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে তারাই। এবারের গ্রীষ্মকালীন দলবদলের মৌসুমে চেলসির খরচ ৪৬৪.১০ মিলিয়ন ইউরো, যা ইউরোপের শীর্ষ লিগ লা লিগার সব ক্লাবের খরচ মিলিয়েও বেশি। এবারের দলবদলের মৌসুমে মধ্যমাঠে ব্রাইটন থেকে ব্রিটিশ রেকর্ড ১১৬ মিলিয়ন ইউরো খরচে ময়েস কাইসেডো, সাউদাম্পটন থেকে ৬২.১ মিলিয়নে রোমেও লাভিয়া, এস্তাদে রেন্নেস থেকে ২৭ মিলিয়নে লেস্লি উগোচুকু দলে টেনেছে চেলসি। আক্রমণভাগেও কম অর্থ ঢালেনি তারা।  আরবি লাইপজিগ থেকে ৬০ মিলিয়নে ক্রিস্তফার এনকুনকু, ম্যানচেস্টার সিটি থেকে কোল পামারের জন্য ৪৭ মিলিয়ন, নিকোলাস জ্যাকসনকে ভিয়ারিয়াল থেকে ৩৭ মিলিয়ন, ডেভিড ওয়াশিংটনকে ১৬ মিলিয়নে সান্তোস থেকে, সান্তোস থেকে আরেক ফরোয়ার্ড অ্যাঞ্জেলোকে ১৫ মিলিয়ন ইউরোতে দলে টেনেছে ক্লাবটি। এ ছাড়া রক্ষণভাগে মোনাকো থেকে অ্যক্সেল ডিসাসিকে ৪৫ মিলিয়নে দলে টেনেছে তারা।

দলবদলে ইউরোপিয়ান লিগের সঙ্গে সৌদির দাপট

লিভারপুল

গেল মৌসুমটা দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে লিভারপুলের। চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা তো হয়নি, তাই খেলতে হচ্ছে ইউরোপা লিগে। তাই এবার নিজেদের নতুন করে গুছিয়েছে অল রেডরা। তাই তো এবারের গ্রীষ্মকালীন দলবদলের মৌসুমে লিভারপুল ১৭২ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে দল সাজিয়েছে। যার মধ্যে ইয়্যুর্গেন ক্লপের দল নজর দিয়েছে মধ্যমাঠে। ব্রাইটন থেকে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী মিডফিল্ডার ম্যাক অ্যালিস্টারকে ৪২ মিলিয়ন ইউরোতে, রায়ান গ্রাভানবার্খকে বায়ার্ন মিউনিখ থেকে ৪০ মিলিয়নে,  ডমিনিক সবজলাইকে আরবি লাইপজিগ থেকে ৭০ মিলিয়নে, ওয়াটারু এন্দোকে স্টুটগার্ট থেকে ২০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে দলে টেনেছে। এদিকে লিভারপুলের দীর্ঘদিনের সঙ্গী অধিনায়ক জর্ডান হ্যান্ডারসন, ফ্যাবিনহো, রবের্তো ফিরমিনোর মতো খেলোয়াড়রা সৌদি আরব প্রো লিগে যোগ দিয়েছেন।

ম্যানচেস্টার সিটি

ঐতিহাসিক ট্রেবল জয়ের পরেই দল ছাড়েন অভিজ্ঞ দুই খেলোয়াড় ইয়াকি গুন্দোয়ান এবং রিয়াদ মাহারেজ। সেই সঙ্গে রক্ষণ থেকে বিদায় নেন এমিরিক লাপোর্তে। তবে সেই অভাব পুষিয়ে নিয়েছেন পেপ গার্দিওলা। উলভস থেকে ৬২ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার ম্যাথিউস নুনেজ, চেলসি থেকে ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার মাতেও কোভাসিসকে ৩০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে দলে ভিড়িয়ে মধ্যমাঠের দুর্বলতা কাটিয়েছেন। এ ছাড়া আক্রমণভাগে স্তেদ রেন্নেস থেকে বেলজিয়ান তরুণ জেরমি ডকুকে ৬০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে দলে টেনেছেন। এখানেই শেষ নয়, আরবি লাইপজিগের হয়ে দুর্দান্ত খেলতে থাকা ডিফেন্ডার জাস্কো গাভারদিওলকে ৯০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে দলে টেনেছে ম্যানচেস্টার সিটি।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

এবারের দল বদলের মৌসুমে বেশ ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। শিরোপার লড়াইয়ে ফিরতে দলের প্রয়োজন অনুযায়ী খেলোয়াড় দলে টেনেছে রেড ডেভিলরা। মধ্যমাঠের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে চেলসি থেকে ৬৪ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে মেসন মাউন্টকে দলে টেনেছে। মধ্যমাঠ আরও শক্তিশালী করতে সোফিয়ান আমরাবাতকেও দলবদলের শেষ দিনে ফিয়োরিন্তিনা থেকে ধারে এনেছে তারা। গোলরক্ষক ডেভিড ডি গিয়ার ক্লাব ছাড়ার পর এই পজিশনের জন্য ইন্টার মিলান থেকে ৫২ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে আন্দ্রে ওনানাকেও দলে টেনেছে তারা। রক্ষণভাগে স্পার্স থেকে এসেছে সার্জিও রেগুলিয়ন। যদিও তিনি ধারে যোগ দিয়েছেন রেড ডেভিলদের ডেরায়। এ ছাড়া আটালান্টা থেকে ডেনমার্কের তরুণ স্ট্রাইকার রাসমাস হইলান্ডকে ৭৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে কিনেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

দলবদলে ইউরোপিয়ান লিগের সঙ্গে সৌদির দাপট

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের মতো খুব একটা ব্যস্ত সময় কাটায়নি লা লিগার দলগুলো। অপেক্ষাকৃত কম খেলোয়াড়ই দলে টেনেছে লা লিগার বড় তিন ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা এবং অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ।

অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ তেমন কোনো খেলোয়াড়ই দলে ভেড়ায়নি। গেল মৌসুমে দলের ওপরেই ভরসা রাখছেন কোচ ডিয়েগো সিমিওনে। তবে কিছুটা ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনা।

বার্সেলোনা

বার্সেলোনার খরচের অঙ্ক তেমন বেশি না হলেও বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় দলে ভিড়িয়ে স্কোয়াড শক্তিশালী করেছে। জিরুনা থেকে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ওরিওল রোমেওকে ৩.৪ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে ক্লাবটি। এ ছাড়া ডিফেন্ডার ইনিগো মার্টিনেজ, ম্যানচেস্টার সিটির জার্মান মিডফিল্ডার ইয়াকি গুন্দোয়ানকে ফ্রিতেই দলে ভিড়িয়েছে কাতালান ক্লাবটি। আর দলবদলের শেষ দিনে ম্যানচেস্টার সিটি থেকে জাও ক্যান্সেলো আর অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে জাও ফেলিক্সকে ধারে দলে ভিড়িয়ে চমক দেখিয়েছে বার্সেলোনা। আর ক্লাব ছেড়েছেন ওসমান দেম্বেলে। তার জন্য পিএসজি গুনেছে ৫০ মিলিয়ন ইউরো। এ ছাড়া ফ্র্যাঙ্ক কেসিয়েকে সৌদির ক্লাব আল আহলিতে ১২.৫ মিলিয়ন ইউরোতে বিক্রি করেছে বার্সা। আর তরুণ প্রতিভাবান ফরোয়ার্ড আনসু ফাতিকে ইংলিশ ক্লাব ব্রাইটনে ধারে খেলতে পাঠিয়েছে।

রিয়াল মাদ্রিদ

এদিকে বার্সেলোনা ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ খেলোয়াড় কেনার পেছনে তেমন অর্থ খরচ না করলেও রিয়াল মাদ্রিদ ছিল বেশ খরুচে। বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে তরুণ প্রতিভাবান ইংলিশ মিডফিল্ডার জুড বেলিংহামকে দলে টেনেছে রিয়াল মাদ্রিদ। এবারের দলবদলের সবচেয়ে বড় ট্রান্সফারগুলোর ভেতর এটি অন্যতম। জুডকে দলে টানতে রিয়াল মাদ্রিদকে গুনছে হয়েছে ১০৩ মিলিয়ন ইউরো। এ ছাড়া তুরস্কের ওয়ান্ডার কিড আরদা গুলারকে ২০ মিলিয়নে দলে টেনেছে রিয়াল। রক্ষণভাগে ফ্রান গার্সিয়াকে এনেছে ৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে। আর ধারে এসি মিলানে দুই মৌসুম কাটানোর পর রিয়ালে ফিরেছেন ব্রাহিম দিয়াজ। আর দলবদলের শেষ দিকে এসে দলের নিয়মিত গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া চোটে পড়াতে চেলসি থেকে ধারে কেপা আরিজাবালাগাকে এনেছে অল হোয়াইটস।

এদিকে রিয়ালের ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় এবং বর্তমান ব্যালন ডি অর জয়ী করিম বেনজেমা আর চুক্তি নবায়ন করেননি রিয়ালের সঙ্গে। সৌদি আরবের লোভনীয় প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে যোগ দিয়েছেন আল ইত্তিহাদে। আর রিয়ালের ইতিহাসের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড় ইডেন হ্যাজার্ড চোটের সঙ্গে লড়াই করে পেরে না উঠে শেষ পর্যন্ত চুক্তি বাতিল করেন রিয়ালের সঙ্গে।

এ ছাড়া লা লিগায় এবার ঘটেনি তেমন বড় কোনো দলবদলের ঘটনা।

বুন্দেসলিগা

জার্মান লিগে মোটামুটি ব্যস্ত সময় করেছে চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখ। সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করেছে ক্লাবটি ইংলিশ ফরোয়ার্ড হ্যারি কেইনের পেছেন। দীর্ঘ প্রায় এক মাস কেইনের জন্য আলোচনা করে টটেনহাম হটস্পার্স থেকে ১০০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে তাকে দলে ভিড়িয়েছে বাভারিয়ানরা। এ ছাড়া নাপোলি থেকে ডিফেন্ডার মিন জায়ে কিমকে ৫০ মিলিয়নে কিনেছে তারা। আর বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে রাফায়েল গুয়েররোকে ফ্রিতে দলে টেনেছে।

তবে এবারের দলবদলের মৌসুমে বায়ার্ন ছেড়ে বেশ কয়েকজন তারকা। ডিফেন্ডার বেনজামিন পাভার্ড ৩০ মিলিয়ন ইউরোতে ইন্টার মিলান, লুকাস হার্নান্দেজ ৪৫ মিলিয়ন ইউরোতে পিএসজিতে, মিডফিল্ডার রায়ান গ্রাভানবার্খ ৪০ মিলিয়ন ইউরোতে লিভারুপুলে, মার্সেল সাবিতজার ১৯ মিলিয়নে ডর্টমুন্ডে। এ ছাড়া গোলরক্ষক ইয়ান সমার ৬.৭৫ মিলিয়নে ইন্টারে পৌঁছেছেন। আর ফরোয়ার্ড সাদিও মানে নাম লিখিয়েছেন ৩০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দল আল নাসেরে।

পিএসজি

এবারের দলবদলের মৌসুমে চেলসির পরে সবচেয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে প্যারিস সেইন্ট জার্মেই। একের পর ফরোয়ার্ডদের দলে ভিড়িয়ে দলকে আরও শক্তিশালী করেছে পিএসজি। মেসি ও নেইমার ক্লাব ছাড়ার পর ক্লাবের আক্রমণভাগের সামর্থ্য বাড়াতে সব মিলিয়ে পাঁচজন ফরোয়ার্ডকে দলে টেনেছে পিএসজি। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় ট্রান্সফার ছিল এঞ্চ্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে ৯৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে রান্ডাক কোলো মুয়ানিকে দলে টানা। এ ছাড়া ফরোয়ার্ড লাইনে আরও দলে ভিড়েছেন ওসমান দেম্বেলে। বার্সেলোনা থেকে তাকে ৫০ মিলিয়ন ইউরোতে দলে টেনেছে পিএসজি। বেনফিকা থেকে পর্তুগিজ তরুণ স্ট্রাইকার গন্সালো রামোসকে ধারে এনেছে পিএসজি। তবে সামনের বছর ধারের চুক্তি শেষ হলেই ৮০ মিলিয়ন ইউরো দিতে হবে তার জন্য। অলিম্পিক লিও থেকে ৪৫ মিলিয়ন ইউরোতে ব্র্যাডলি বারকোলাও দলে টেনেছে তারা। রেইমস থেকে হুগো একিটিকে আনতে ২৮.৫ মিলিয়ন ইউরোর খরচ করেছে পিএসজি। এ ছাড়া রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ফ্রিতে মার্কো অ্যাসেন্সিওকেও আক্রমণভাগে ভিড়িয়েছে প্যারিসের ক্লাবটি।

তবে এখানেই থামেনি তারা। মধ্যমাঠে স্পোর্টিং সিপি থেকে ৬০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ম্যানুয়েল উগারতে। আর মায়োর্কা থেকে আরেক মিডফিল্ডার কাং ইন লিকে ২২ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে দলে এনেছে তারা। রক্ষণভাগে লুকাস হার্নান্দেজকে ৫০ মিলিয়নের বিনিময়ে কিনেছে তারা। আর ইন্টার মিলান থেকে ফ্রিতে এনেছে মিলান স্ক্রিনিয়ারকে।

সিরি আ

ইতালিয়ান সিরি আ’র ক্লাবগুলোও খুব একটা ব্যস্ত সময় কাটায়নি। তবে ইন্টার মিলান ও এসি মিলান কিছুটা ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে দলবদলের মৌসুমে।

ইন্টার মিলান ৩০ মিলিয়নের বিনিময়ে বায়ার্ন মিউনিখ থেকে এনেছে বেনজামিন পাভার্ডকে। আর গোলরক্ষক ইয়ান সমারকে এনেছে ৬.৭৫ মিলিয়ন ইউরোতে। এ ছাড়া অলিম্পিক মার্সেই থেকে ফ্রিতে অ্যালেক্সিস সানচেজ ফিরিয়েছে তারা।

মিলানের আরেক ক্লাব এসি মিলান বেশ কয়েকজন তারকাকে দলে টেনেছে। চেলসি থেকে ক্রিস্তিয়ান পুলিসচকে ২০ মিলিয়নে, ভ্যালেন্সিয়া থেকে ২০ মিলিয়নে ইউনুস মুসাহ, ভিয়ারিয়াল থেকে স্যামুয়েল চুকুয়েজকে ২০ মিলিয়ন ইউরোতে দলে টেনেছে। এ ছাড়া চেলসি থেকে রুবেন লফটাস চিককে আনতে খরচ করেছে ১৬ মিলিয়ন ইউরো।

জোসে মোরিনহোর এএস রোমা এবার চমক দিয়েছে চেলসি থেকে ধারে রোমেলু লুকাকুকে দলে টেনেছে। লুকাকুর জন্য লোন ফি হিসেবে ৫.৮ মিলিয়ন ইউরো দিতে হবে রোমাকে। এ ছাড়া পিএসজি থেকে আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার লেনার্দো পারদেসকে ২.৫ ইউরোতে আর রেনাতো সানচেজকে ধারে এনেছে রোমা।

এদিকে উয়েফার নিষেধাজ্ঞায় পড়া জুভেন্টাস ম্যানুয়েল লোকাতেল্লিকে ৩০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে সুসোলো থেকে কিনেছে আর তিমুহি ওয়েয়াহকে ১১.৩ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে লিল থেকে দলে ভিড়িয়েছে।

দলবদলে ইউরোপিয়ান লিগের সঙ্গে সৌদির দাপট

সৌদি প্রো লিগ

ইউরোপিয়ান ফুটবলের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে টেক্কা দিয়েছে এবার সৌদি আরব প্রো লিগ। ফুটবলপ্রেমী থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞরা পর্যন্ত এবার বলছেন সৌদি আরব প্রো লিগেই বিশ্বের সবচেয়ে তারকাবহুল লিগ বর্তমানে।

এক নজরে সৌদি প্রো লিগে যোগ দেওয়া তারকাদের তালিকা—

আল আহলি

গ্যাব্রি ভেইগা, রিয়াদ মাহারেজ, রজার ইবানেসজ, অ্যালান সেইন্ট ম্যাক্সিম, মেরিয়াহ ডেমিয়ারাল, এডুয়ার্ড মেন্ডি, ফ্র্যাঙ্ক কেসিয়ে, রবের্তো ফিরমিনো।

আল ইত্তিহাদে

ফ্যাবিনহো, জোটা, করিমা বেনজেমা, এনগোলো কান্তে।

আল নাসের

ওতাভিও, সাদিও মানে, এমিরিক লাপোর্তে, সেকো ফোফানা, অ্যালেক্স তেয়াস।

আল হিলাল

নেইমার জুনিয়র, ম্যালকম, রুবেন নেভেস, আলেক্সান্ডার মিত্রোভিচ, সার্জ মিলিঙ্কোভিচ স্যাভিচ, কালিদু কুলিবালি, বুনো, মুয়াথিউন পেরেইরা।

সব মিলিয়ে এবারের দলবদলের মৌসুমে সৌদি আরব প্রো লিগ খেলোয়াড়দের দলে ভেড়াতে খরচ করেছে মোট ৮৭৩ মিলিয়ন ইউরোরও বেশি। যা ইউরোপের শীর্ষ লিগ স্প্যানিশ লা লিগা, জার্মান বুন্দেস লিগা এবং ইতালিয়ান সিরি আ’র থেকেও বেশি। কেবল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ২.৮১ বিলিয়ন ইউরো এবং ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান ৯০০ মিলিয়ন ইউরো সৌদি প্রো লিগের চেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেছে এবারের দলবদলের মৌসুমে।

সারাবাংলা/এসএস



Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button