Uncategorized

উত্তম কুমার: জন্মদিন ৩ সেপ্টেম্বর, পালন করতেন ২৪ দিন পর!

বাংলা সিনেমায় মহানায়ক বলতে সবাই একজনকেই বোঝে, উত্তম কুমার। সুদর্শন চেহারা আর দক্ষ অভিনয়ে তিনি সেই অবস্থান একান্ত নিজের করে নিয়েছেন। তাই মৃত্যুর চার দশক পেরিয়ে গেলেও এখনও তার প্রতি দর্শকের ভালোবাসা যেন বিন্দুমাত্র কমেনি। বরং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে যাচ্ছে উত্তমের চার্ম, অভিনয়ের দ্যুতি।

রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) উত্তম কুমারের জন্মদিন। ১৯২৬ সালের এই দিনে কলকাতায় জন্মেছিলেন কালজয়ী এই নায়ক। সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও অদম্য চেষ্টা আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি টলিউডের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়কে পরিণত হয়েছিলেন।

মজার ব্যাপার হলো, ৩ সেপ্টেম্বর জন্মদিন হলেই এই দিনে উদযাপন করতেন না উত্তম কুমার। বরং আরও ২৪ দিন পর, অর্থাৎ ২৭ সেপ্টেম্বর জন্মদিন পালন করতেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যম ‘বর্তমান’-কে তথ্যটি জানিয়েছেন অভিনেতার ভাতিজি, তরুণ কুমারের কন্যা মনামী বন্দ্যোপাধ্যায়।

তিনি জানান, উত্তম কুমারকে তিনি ‘জ্যাজান’ বলে সম্বোধন করতেন। মনামীর ভাষ্য, ‘৩ সেপ্টেম্বর জ্যাজানের জন্মদিন। কিন্তু আমাদের বাড়িতে তা পালন হতো ২৭ সেপ্টেম্বর। তার কারণ সেপ্টেম্বর মাসে তিনজনের জন্মদিন। ৩ সেপ্টেম্বর জ্যাজান, ৭ সেপ্টেম্বর আমার দাদা মানে গৌতমের (উত্তম পুত্র) জন্মদিন, আর ২৭ সেপ্টেম্বর জেঠিমা অর্থাৎ গৌরীদেবীর জন্মদিন। ফলে ২৭ সেপ্টেম্বর জেঠিমার জন্মদিনেই বাড়িতে একসঙ্গে তিনজনের জন্মদিন পালন হতো। ৩ সেপ্টেম্বর আমাদের বাড়িতে কিছু হতো না।’

তবে যেহেতু উত্তম কুমার সিনেমার তারকা ছিলেন, তাই না চাইলেও ৩ সেপ্টেম্বর জন্মদিন পালন করতে হতো। অবশ্য সেটাকে পারিবারিক আয়োজন মনে করতেন না তারা। পারিবারিক আয়োজন ২৭ সেপ্টেম্বরেই হতো, যেখানে তাদের আত্মীয়-স্বজন ও ঘনিষ্ঠরা উপস্থিত থাকতেন। 

মনামী বলেন, ‘আমাদের বাড়ির সামনের অংশে চারতলায় জেঠিমা থাকতেন বলে ওখানেই পার্টি হতো। ১৯৬৪ সালে আমার জন্ম, জ্ঞান হওয়ার পর থেকে সেখানেই ২৭ সেপ্টেম্বরে জন্মদিনের পার্টি হতে দেখেছি। গানবাজনা, বিশেষ খাওয়াদাওয়া অনেক আনন্দ হতো।’

উল্লেখ্য, উত্তম কুমারের আসল নাম অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। ছোটবেলা থেকেই তিনি অভিনয়ের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু অভাবের কারণে লেগে পড়েন কলকাতা বন্দরের কেরানির চাকরিতে। কাজের চাপে স্নাতক অব্দি শেষ করতে পারেননি তিনি। তবে এসবের ফাঁকেও লুকিয়ে, সময় করে সিনেমা দেখতেন, স্বপ্ন বুনতেন।

উত্তম কুমার চাকরির পাশাপাশি মঞ্চনাটকে অভিনয় করতেন উত্তম কুমার। সেই সূত্রে বহু দিন, পথ ঘুরে সিনেমায় সুযোগ পান। তার অভিনীত প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘দৃষ্টিদান’ (১৯৪৮)। পরবর্তী চার বছরে তিনি বেশ কয়েকটি সিনেমায় কাজ করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সবগুলো সিনেমাই হয়েছিল ব্যর্থ। এজন্য ইন্ডাস্ট্রির লোকজন তাকে বলতো ‘ফ্লপমাস্টার’।

১৯৫২ সালে উত্তম কুমারের ক্যারিয়ারের মোড় ঘোরে। ‘বসু পরিবার’ সিনেমায় অভিনয় করে কিছুটা সাফল্য পান। একই বছর ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ সিনেমা দিয়েই তিনি তারকা হয়ে ওঠেন। এই ছবির মাধ্যমেই প্রথমবার সুচিত্রা সেনের সঙ্গে জুটিবদ্ধ হন উত্তম। পরবর্তীতে তারা জুটি হয়ে অনেকগুলো সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। 

উত্তম অভিনীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ছবি হলো- ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘হারানো সুর’, ‘সপ্তপদী’, ‘জতুগৃহ’, ‘লাল পাথর’, ‘থানা থেকে আসছি’, ‘নায়ক’, ‘অমানুষ’, ‘এন্টনী ফিরিঙ্গি’ ইত্যাদি। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে একবার এবং প্রযোজক হিসেবে চারবার ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার তার সম্মানে ‘মহানায়ক পুরস্কার’ চালু করেছে।



Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button